একজন সংগ্রামী নারীর জীবন কথা – ১

বিউটি (ছদ্মনাম) ২১ বছর বয়সী এক তরুনী, সুন্দরী এবং উজ্জল তার হাসি যে কারই নজর কাড়ে। তার জন্ম মধ্যবিত্ত একটি পরিবারে এবং সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। দামী পোশাক পড়ে, কখনো দামী গাড়িতে চড়েও সে সুখী নয়। তার কোন আত্মীয় তাকে পছন্দ করে না এমনকি তার সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখে না। সে আমাদের সমাজে একজন অপরাধীর মত বসবাস করে। যদিও সে কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল এবং বর্তমানে সে একজন যৌনকর্মী(বাসা–বাড়ি ভিত্তিক)।

১৯৮৬ সালে ঢাকার রায়ের বাজারে একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করে বিউটি। পাঁচ বোন ও দুই ভাই এর মধ্যে বিউটি ছিল তার বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার বাবা একজন ছোট মুদির দোকানদার ছিলেন আর তার মা ছিলেন একজন গৃহিনী। তার বাবা ফরিদপুর জেলার এবং তার মা ছিলেন ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা।  তার মায়ের অনেক আত্মীয় ঢাকায় বাস করত। বিউটি এবং তার পরিবারের কোন সদস্যেরই গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত ছিল না। কিন্তু তার দাদা-দাদী গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন বলেই তার বাবা মাঝে মাঝে যেখানে যেতেন।      

তার ছোটবেলায় সে এবং  তার প্রতিবেশীর মেয়ে ভর্তি হয় বাড়ির কাছের একটা স্কুলে। দুজনে একসাথে স্কুলে যেত। বিউটি তখন প্রথম শ্রেনীর ছাত্রী, স্কুল শেষে একদিন সে এবং তার বান্ধবী বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠে পড়ে কিন্তু দুজনের কেউই জানেনা কোথায় যাচ্ছে। বাসের হেলপার তাদেরকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। তারপর তারা বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল কিন্তু তারা পথ হারিয়ে ফেলল। অনেক পথ হাঁটতে হাঁটতে তারা দুর্বল হয়ে পড়লে কাঁদতে শুরু করে। অনেক লোক তাদেরকে জিজ্ঞেস করল তারা কোথা থেকে এসেছে এবং ঠিকানা কি ? কিন্তু দুজনে কেউই তাদের ঠিকানা বলতে পারেনি। অবশেষে পুলিশ তাদেরকে থানায় নিয়ে যায় এবং পরের দিন মিরপুর ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে তারা শুধুমাত্র পরিবারে সদস্যদের নামই বলে কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনি। তার কিছুদিন পরে তাদেরকে গাজীপুর ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিল।

মুলতঃ এটা ছিল ১৯৯৫ সালের কথা। পাঁচবছর এর মত বিউটি ভবঘুরে কেন্দ্রে ছিল। সে ভবঘুরে কেন্দ্রে এন.জি.ও স্কুলে ক্লাস-৬ পর্যন্ত পড়েছে। তার স্কুল শিক্ষকের তার ভাল সম্পর্ক হয় এবং তারপর তাকে প্রথম সে যে স্কুলে পড়াশুনা করেছিল সেই স্কুলের নাম বলল। তারপর তার স্কুলের শিক্ষক তার ঐস্কুলে যোগাযোগ করে এবং তার বাবা-মার সাথে যোগাযোগ করে। খবর পেয়ে তার বাবা-মা তাকে ভবঘুরে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। প্রথম দিকে বিউটির বাবা-মা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজাখুঁজি করেছিল কিন্তু তারা কোথাও বিউটির কোন সন্ধান পায়নি এবং পরে বিউটির বাবা-মা এবং আত্মীয় স্বজন ধারনা করেছিল যে সে মারা গেছে। তার মা এবং পরিবারের অন্যরা অনেক দিন পর তাকে দেখে খুব খুশি হয়।

 পরিবারের সাথে বিউটির দিনগুলো আনন্দেই কাটছিল। সে পূনরায় ক্লাস-৬ ভর্তি হয় এবং তার শখ ছিল নৃত্য, তাই পড়াশুনার পাশাপাশি বাসার কাছের একটি নাচের স্কুলেও ভর্তি  হয়। একবছর পর যখন সে ক্লাস-৭ এ পড়ত  তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে নাচত এবং ১০০০ টাকা করে পেত। ধীরে ধীরে লোকজনের কাছে সে একজন নৃত্যশিল্পী হিসাবে পরিচিতি পেতে থাকে। আনন্দেই কাটছিল তার দিনগুলো।

তার জীবনের পরের কথা আসছে খুব শিগ্রই……………….

১. তার জীবনের একটা দুঃঘটনা এবং কিভাবে সে একজন যৌনকর্মী হল?

২. কিভাবে সে দুবাই গিয়েছিল ? কিভাবে কেটেছিল তার একটি বছর?

৩. তার বর্তমান জীবন এবং তার যৌন পেশা?

অনুবাদ: তাসলিমা আক্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *