“যৌতুক” বাংলাদেশের নারীদের একটি বড় সমস্যা

আমাদের এ বাংলাদেশে একটি গনতান্ত্রিক দেশ। প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বাস ছোট এ ভূমন্ডলে।ছোট এদেশে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে নারীরা। তারপর ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা ভেঙ্গে তারা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশের নারীদের একটি অন্যতম সমস্যা হল যৌতুক প্রথা । যৌতুক দেয়া ও নেয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশ সরকার যৌতক প্রথা প্রতিরোধে আইন প্রনয়ন করেছেন। তারপর ও নারীরা যৌতুকের জন্য শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। তার একটি প্রতিবেধন তুলে ধরা হল আমার দেশ সংবাদপত্র থেকে:

“আমার তো টেহা-পয়সা কিছুই নাই কা, দুনিয়াটা টেহার গোলাম, অহন আমার কি অইব, কই যামু-কি খামু, বেটায় খালি মাইর-ধইর করে, ঘরত থাহন যায় না; দুই মাইস ধইরা চাকরিতে যাই না; একটা মীমাংসা দরকার, আমার টেহাগুলান ফেরত চাই, হের লগে আমার আগের হেই জীবনডাও! গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হালিমা বেগম অশ্রুসিক্ত ভাবেই বলছিলেন তারর কথাগুলো।

দ্বিতীয় পর্ব:

কোনাবাড়ির আমবাগ গ্রামের স্থনীয় বাসিন্দা হালিমা বেগম (বয়স ২৫)স্বামী তাজুল ইসলাম, বরিশাল থেকে কর্মস্থানের খোঁজে আমবাগে আসেন। এখানে তিনি মিশুক চালানোর কাজ শুরু করেন। একই এলাকায় চেনা-জানার সূত্র ধরে তাজুলের সঙ্গে হালিমার বিয়ে হয়। প্রায় দেড় বছর সংসার জীবনের একপর্যাযে হালিমা জানতে পারে সে তাজুলের দ্বিতীয় স্বামী প্রায়ই হলিমার কাছে টাকা চেয়ে ব্যর্থ হলে তাকে শারীরিক আঘাত করত। এভাবে নির্যাতনেরমাত্রাও বাড়তে থাকে। হালিমার অজান্তে তার বড় বোনের কাছ থেকে ব্যবসার কথা বলে তাজুল বেশ কিছু টাকা সংগ্রহ করে।নিজস্ব একটি গাড়ি থাকলে সুবিধা অনেক, এই বলে হালিমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন (হালিমার বিয়ের আগে সঞ্চিত অর্থ)।

এরপর থেকে আরো অর্থ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তার স্বামী হালিমার কাছে আবদার করতে থাকে। এক সময় তা শারীরিক নির্যাতনের পর্যায়ে যায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ভয় দেখায়। ধীরে ধীরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তাজুলের অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। হালিমা বিষয়টি এলাকার চেয়ারম্যানকে অবগত করলে তিনি তা তদন্ত করেন। তাজুলকে নোটিশ প্রদান করা হলে তিনি হালিমাকে হুমকি দেন। ইউনিয়ন পরিষদে বিচারের দিন তাজুল অনুস্থিত থাকেন। ফলে বিচারকার্যের কোনো সুফল মেলেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চেয়ারম্যান লোক পাঠালেও তাজুলকে খুঁজে আনা সম্ভব হয়নি। বিচার চলাকালীন হালিমাকে বেশ কয়েকজন বিচার স্হগিত করতে বলে। যদি এই বিচার প্রক্রিয়াধীন থাকে তাহলে তার বিপদের আশঙ্কা থাকবে। পরবর্তী তারিখ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সে দিনের মতো বিচার স্হগিত রাখা হয়।

বাপের বাড়ির সম্পত্তি

একই দিন কোনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে চলছিল আরো একটি বিচারকার্য জোরুন মধ্যপাড়া কোনাবাড়ি থেকে আগত দুই বোন আমেনা (বয়স ৪৮) ও আসিয়া (বয়স ৪০) উপস্থিত ছিলেন। মুসলিম আইন অনুযায়ী দুই বোনই পিতার প্রাপ্য সম্পত্তির অংশের মূল্য (নগদ অর্থ) তারা উভয়েই স্বামীর অজান্তে টিপসই দিয়ে গ্রহণ করে। নগদ টাকা হাতে আছে স্বামী জানতে পারলে সংসারে অশান্তি হবে। তাছাড়া তারা তাদের ছেলেমেয়ের কথা ভেবেই টাকার কথা গোপন রাখে। এক সময় লোক মারফত উভয় বোনের স্বামীই টাকার কথা জানতে পারে। টাকার কথা অস্বীকারের সূত্র ধরেই পরিবারে চলছিল নানা অশান্তি। বেশ কয়েকদিন বিচার চলার পর দুই বোনই টাকা নেয়া এবং টিপসইয়ের কথা স্বীকার করেন। ফলে বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। তবে টাকা গচ্ছিত থাকবে মেয়ের বিয়ের জন্য এই রায় ঘোষণা করা হয়।”

উপরোক্ত এমন ঘটনার মত বাংলাদেশের অনেক নারীরাই নির্যাতিত হচ্ছে এবং স্বীকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন অপ্রতিকুল অবস্থার। তারপর ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা ভেঙ্গে তারা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

 

লিখেছেন তাসলিমা আক্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *